TT Ads

সামাজিক ও অবকাঠামো খাতে আরো বেশি ব্যয় করার জন্য সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও অর্থ ব্যয় ব্যবস্থার সংস্কার করায় জোর দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির চতুর্থ রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। সফর শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সংস্থাটি।

প্রয়োজন উল্লেখ  করে আইএমএফের মিশনপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় কর সংগ্রহের পরিমাণ অত্যন্ত কম। তাই কর ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। কর ব্যবস্থাকে যৌক্তিক, স্বচ্ছ ও দক্ষ হতে হবে। এর মানে হচ্ছে অব্যাহতি হ্রাস, কর সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং কর নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করতে হবে।’

ব্যাংক খাতের সমস্যা দূর করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আইএমএফ মিশনপ্রধান বলেন, ‘আইন-কানুনগুলো বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং সরকারকে দ্রুত নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঠিক করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো স্বাধীন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সংস্কার করতে হবে।’

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাঠামোগত সংস্কারের গতি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘সুশাসন উন্নত করা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর মাধ্যমে আরো বেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। এতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে এবং তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রফতানি খাতকে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ প্রতিনিধি দল জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলমান এবং সঠিক পথে রয়েছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে আগামী জুনে সিদ্ধান্ত হবে। জুনে আইএমএফের পর্ষদ সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

আইএমএফের সদ্য সমাপ্ত মিশন বাংলাদেশ সফরকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছে।

এ সময় ঋণ কর্মসূচির অধীন বিভিন্ন সংস্কার ও শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ (বিপিসি) সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে আইএমএফ মিশনের আলোচনা করেছে। আলোচনায় রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার এখনো বাজারভিত্তিক না করার বিষয়টিও উঠে আসে। এ দুটি বিষয়ে ছাড় না দেয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের সদ্য সমাপ্ত মিশন বেশ কঠোর ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মূলত এ দুই বিষয়ে বাংলাদেশ ও আইএমএফের সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আরো আলোচনার অবকাশ তৈরি হয়েছে।

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভায় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে দু-একদিনের মধ্যেই অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগের সচিবসহ সরকারের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। সেখানে ঋণ কর্মসূচির শর্ত নিয়ে আইএমএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা হবে। মূলত বিদ্যমান বাস্তবতায় রাজস্ব আহরণ ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা-সংক্রান্ত কঠিন শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এ আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

TT Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *