সরকারের সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপে সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছে বিএফআইইউ এর প্রধান কর্মকর্তা জনাব মোঃ মাসুদ বিশ্বাস।
বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউ এর ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চলতি মাসের ১৮ জুন শনিবার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা, ঢাকায় দিনব্যাপী দু’টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারের বিকালের সেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রধান অতিথি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ ও এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিবি) এর চেয়ারম্যান জনাব সেলিম আর. এফ. হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর প্রধান কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ বিশ্বাস এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির তাঁর বক্তব্যে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন সক্ষমতামূলক সূচকে ক্রমাগত উর্ধ্বগামী অবস্থানে বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বাংলাদেশ সরকারের সময়োচিত রাজস্ব নীতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়ক মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ অব্যাহত থাকাকালীন সময়েও দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
এ সময়ে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় অর্থায়ন বা মূলধন যোগানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অসামান্য ভূমিকা পালন করছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে মূল সংস্থার ভূমিকা পালনকারী ‘বিএফআইইউ’ ও সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা, বিচারিক ব্যবস্থা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিভাগ, রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব জনাব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে একটি সুসংহত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সম্পর্কিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমগুলোকে জাতির সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহবান জানান।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি), বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) ও এসোসিয়েশন অব এন্টি-মানিলন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ (অ্যাকব) এর চেয়ারম্যানগণ এবং বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিগণ তাদের বক্তব্যে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক পরিপালনীয় বিষয়সমূহ তাদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে যথাযথ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এছাড়া, সভায় দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক জনাব মোঃ মাহমুদুল হোসাইন খান এবং সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির বক্তব্য রাখেন। বিএফআইইউ এর অতিরিক্ত পরিচালক জনাব কামাল হোসেন তার উপস্থাপনায় বিভিন্ন উন্নত দেশের মিউচ্যুয়াল ইভাল্যুয়েশন রেটিং এর চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের এএমএল/সিএফটি রেটিং অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বেশ ভালো অবস্থানে আছে।
এছাড়া, অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং কেইসের বিচারিক রায়ের সংখ্যা অনেক। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার সম্পর্কিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যালেন্সশীটের দায় ও সম্পদ দুটি দিকই সবার সামনে উপস্থাপনের অনুরোধ করেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে কার্যরত বিভিন্ন অংশীজন মন্ত্রণালয়-বিভাগ-সংস্থার প্রতিনিধিগণ, বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, প্রধান ও উপপ্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা. করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী বিদেশি ব্যাংকের রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের প্রতিনিধি এবং বিএফআইইউ এর সর্বস্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।