বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে অবাস্তব অনেক কিছুই। তা হলো সৌদি আরব, চীন, পাকিস্তান জোট। সৌদি আরব অনেক দিন ধরেই মার্কিন শিবিরে রয়েছে। পাকিস্তান আর চীন উভয় শিবিরেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তব কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনাদের দিকেই
বেশি ঝুঁকেছে। ভূ-কৌশলগত টালমাটাল এ সময়ে সৌদি আরব-পাকিস্তান-চীন জোট নতুন কিছুর ইঙ্গিতই দিতে পারে। সম্প্রতি সৌদি আরব নিশ্চিত করেছে যে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
রিয়াদের এই সিদ্ধান্ত একটি বড় ধরনের কৌশলগত ঘটনা। এটি কেবল সিপিইসিকেই জোরদার করবে না, সেইসাথে সৌদি আরব, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে নতুন কৌশলগত জোট গঠনের প্রয়াসও। উল্লেখ্য, সিপিইসির লক্ষ্য হলো ব্যাপকভিত্তিক সড়ক, রেলওয়ে ও বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট হলো এই সিপিইসি। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা মানে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরেকটু সরে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু চীনাদের এ উদ্যোগের প্রবল বিরোধিতা করছে।
চীনের তহবিলপুষ্ট সিপিইসি (এতে বেইজিং ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে) হলো বৃহত্তর ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (ওবিওআর) প্রকল্পের অংশবিশেষ। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে এই বলে সমালোচনা হচ্ছে যে, এটি গ্রাহক দেশগুলোকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলছে।
বস্তুত মালয়েশিয়া গত বছর ওবিওআরের দুটি বড় প্রকল্প বাতিল করেছে, এই ভয়ে যে এগুলো দেশটিকে দেউলিয়া করে ফেলবে। গ্রাহক দেশগুলোকে দেনার দায়ে বেঁধে ফেলা নিয়ে ভয় ক্রমাগত বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে গোয়াদরে তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠার সৌদি সিদ্ধান্ত সিপিইসি ও ওবিওআরকে শক্তিশালী করবে। এটি চীনা প্রকল্পগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়াবে, এগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে তুলে ধরবে।
চীন ওবিওআর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে এসব প্রকল্প যাতে পারস্পরিকভাবে কল্যাণকর হয়, সেটিও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বোঝানো প্রয়োজন। আবর-যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে চীনের সাথে কৌশলগত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ায় বেইজিংকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাম্বানতোতার ঘটনাটি চীনের জন্য ইতিবাচক হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের পাকিস্তান সফরকালে গোয়াদরে আনুষ্ঠানিক সৌদি বিনিয়োগ নিশ্চিত হলে তা চীনা পরিকল্পনার জন্য আশীর্বাদপুষ্ট হবে।


