পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সর্বপ্রথম সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত ঘোষণাকারী হোটেলকে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিবে সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে কক্সবাজারস্থ সকল হোটেল মালিকদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, সন্তানদেরকে নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, পলিথিন সস্তা না, এর বিনিময়ে আমাদের কঠিন মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে, ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তিনি এসময় পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের বা চটের ব্যাগ ব্যবহারের আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা বলেন, আদালত উপকূলীয় জেলাগুলোতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি নিষিদ্ধ পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন অগ্রগতি মনিটরিং করার জন্য নিয়মিত হোটেলে লোক পাঠানোর ডিসিকে নির্দেশনা দেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সাথে মিলে ওয়ার্কপ্ল্যান প্রস্তুত করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

উপদেষ্টা বলেন, পর্যটন আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও, পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। প্লাস্টিক দূষণ শুধু প্রকৃতিকে নয়, পর্যটনকেও হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান, যাতে কক্সবাজার একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে পারে।

সভায় তিনি সমুদ্র তট ও আশপাশের এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব তুলে ধরেন এবং তা বন্ধে হোটেল মালিকদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন।

জেলা প্রশাসক কক্সবাজারে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে পরিকল্পনা তুলে ধরেন। হোটেল মালিকগণও প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জমির উদ্দিন প্লাস্টিকের দূষণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন। তিনি জুলাই ২০২৫ এর মধ্যে কক্সবাজারের ৫০০ হোটেল ও ৩০০ হোটেলে বাস্তবায়ন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক করার উদ্যোগের কথা জানান।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে জনবান্ধব ও যুগোপযোগী করতে টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট ও বিল্ডিং কন্সট্রাকশন অ্যাক্ট নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। অল্প পরিবর্তনে কাজ হবে না। সময় ও বাস্তবতার চাহিদায় প্রয়োজনীয় কিছু রেখে নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজউকের বোর্ডে কেবল আমলা থাকলে চলবে না। বোর্ডে শহর পরিকল্পনায় দক্ষ বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে। ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে কাজ করতে হবে।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, রাজউক চেয়ারম্যানের রেসিডেন্সিয়াল ভবনকে কমার্শিয়াল করার ক্ষমতা রহিত হওয়া উচিত। মহাপরিকল্পনার বাইরে না গিয়েই বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের জন্য একটি নতুন ভিশন দরকার। সেই ভিশনে সিভিল সোসাইটি, রাজউক ও সাধারণ মানুষের মতামত প্রতিফলিত হওয়া উচিত। জনগণের সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, যাতে ঢাকার ওপর চাপ কমে।

তিনি বলেন, রাজউক কি ডেভেলপার না রেগুলেটর—তা পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে হবে। রাজউককে আর হাউজিং করতে দেয়া যাবে না। গৃহহীনদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা হতে পারে, ধনীদের জন্য নয়।

তিনি আরও বলেন, গোটা এলাকাভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। বেসরকারি হাউজিং নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস আগে ছিল না, এখন তা জরুরি। রাজউককে রাজনৈতিক চাপে রাখা যাবে না।

তিনি পূর্বাচলের জমি ধ্বংসের সমালোচনা করে বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের জন্য হাউজিং করার যৌক্তিকতা নেই। রাজউককে জাতীয় ও নির্মিত ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন রাজউকের দায়িত্ব। রাজউকের ভবনটিও আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, প্রতিটি প্রকল্পের এক্সিট প্ল্যান থাকতে হবে। রাজউক ও এস্টেট ডিপার্টমেন্টকে জনসেবামুখী হতে হবে। সেবা ডিজিটালাইজ করতে হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সুপারভিশন আউটসোর্স করতে হবে। বাইরের বিশেষজ্ঞ দিয়ে অডিট করাতে হবে।

তিনি বলেন, তোতাইল বিলের মতো জলাশয় পুনঃখনন করতে হবে। হাউজিং প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও মনিটরিং চালু রাখতে হবে। রাস্তার পাশে গাছ লাগাতে হবে। এলাকা না বাড়িয়ে সুপারভিশন বাড়াতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাকে তাদের কাজ করতে দিতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নজরুল ইসলাম, রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলামসহ রাজউকের কর্মকর্তাগণ বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো “চীন-বাংলাদেশ পিপল-টু-পিপল এক্সচেঞ্জ ইয়ার: ইউনান এডুকেশন এ্যান্ড হেলথ প্রমোশন” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী। চীনের ইউনান প্রদেশের সরকার ও ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস এবং সহ-আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে শুভ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।

রোববার (২০ এপ্রিল) অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনের ইউনান প্রদেশের গর্ভনর ওয়াং ইউবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) এর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে চীনের কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির সাথে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্মাক্ষর হয়।

এই সমঝোতা স্মারক (MoU) স্মারক হওয়ায় চীন-বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নতুন অধ্যায়ের শুরু হলো। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) এক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যৌথ গবেষণা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বিনিময়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি শেয়ার এবং স্কলারশিপ প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হবে এই এমওইউ এর মাধ্যমে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য, সংক্রামক রোগ এবং চিকিৎসা প্রশিক্ষণ বিষয়ে চীনের অগ্রগতি বাংলাদেশকে কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারবে। এই অনুষ্ঠান দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কে আরও গভীর করবে এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে।

চিকিৎসকরা আরো মনে করেন, রোগ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, টেকনিক্যাল ট্রেনিং, যৌথ গবেষণা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে। চীনের ইউনান প্রদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পারস্পরিক উন্নয়ন ও বোঝাপড়া গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে আজকের অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বগণ এ ধরণের আয়োজন চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন উন্মেচিত করেছে বলে উল্লেখ করেন। এই আয়োজন শিক্ষা খাতে সহযোগিতা যেমন ইউনান প্রদেশের সাথে যৌথ গবেষণা, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, স্কলারশিপ ও শিক্ষা উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হওয়া, স্বাস্থ্য খাতে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

আজকের আয়োজন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে বিজ্ঞ আলোচকগণ বলেন, ইউনান প্রদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অভিজ্ঞতা ও উন্নয়নের ধারা বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশেষ করে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা গড়ে তোলা, ইউনান প্রদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, ছাত্র ও শিক্ষকদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম পরিচালনা, স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের ব্যবস্থা জোরদার করা, দুই দেশের সরকারের, বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং দূতাবাসের সমন্বয়ে যৌথ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা এবং সর্বোপরি দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ করতে এই উদ্যোগ বিরাট ভূমিকা রাখবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় অভিযোজন কার্যক্রম জোরদার করা হবে। বিশেষ করে উপকূলীয়, পাহাড়ি এবং খরা প্রবণ এলাকাগুলোর মানুষের জীবিকা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টেকসই এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

রোববার (২০ এপ্রিল) ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে “জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন কর্মকাণ্ড” বিষয়ক সভায় সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার প্রয়োজনীয় অভিযোজনমূলক প্রকল্প গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের চাহিদা ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অভিযোজন কার্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অভিযোজন কাঠামো গড়ে তুলতে আমরা সকলে একযোগে কাজ করব।

সভায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, যুগ্মসচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) ধরিত্রী কুমার সরকার-সহ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোজন বিষয়ক বর্তমান কার্যক্রম, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

শান্তিরক্ষা মিশনেে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যসহ আরও বেশি হারে ফোর্স নেয়ার জন্য জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অভ পিস অপারেশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।

রোববার (২০ এপ্রিল) উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অভ পিস অপারেশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জিন পেইরি ল্যাকরোইস সাক্ষাৎকালে এ অনুরোধ জানান।

বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান, বর্তমান অবস্থান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, মিশনের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য অফিসার ও ফোর্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি, নারী পুলিশ অফিসারদের সমন্বয়ে নারী প্লাটুন প্রেরণ, মিশনে বিজিবি ও আনসার সদস্য প্রেরণের সম্ভাব্যতা, দক্ষিণ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ফরমড পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) প্রেরণ, রোহিঙ্গা সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পুলিশসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে শীর্ষ পদগুলোতে যাতে বাংলাদেশী অফিসাররা আরও অধিক হারে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি। তিনি এসময় সারাবিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রেরণের জন্য আমাদের একটি ফিমেল প্লাটুন প্রস্তুত রয়েছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অভ পিস অপারেশন (ডিপিও)-এর সহযোগিতা প্রয়োজন যাতে তারা প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দ্রুত শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত হতে পারে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাফল্যের সহিত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অভ কঙ্গো থেকে দক্ষিণ সুদানে দু’টি Formed Police Unit (FPU) মোতায়েন করে। বাংলাদেশের প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স সত্বেও বর্তমানে সেখানে কোনো FPU নেই। তিনি আরও বলেন, যদিও জাতিসংঘ ২০১৪ সাল থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে একটি মিশন বজায় রেখেছে, সেখানেও বাংলাদেশের কোনো FPU প্রতিনিধিত্ব নেই। উপদেষ্টা এ দু’টি দেশে বাংলাদেশ থেকে FPU নেয়ার জন্য আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে অনুরোধ করেন।

উপদেষ্টা আরও বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনের পাশাপাশি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শুরু থেকে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের পর রোহিঙ্গা সমস্যা দূরীকরণে আমাদের জনগণের মধ্যে আশা জেগেছে। উপদেষ্টা এসময় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের আরো সময়োপযোগী ও কার্যকরী উদ্যোগ কামনা করেন।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মোঃ মাহাবুবুর রহমান, রাজনৈতিক-১ অধিশাখার যুগ্মসচিব মুঃ জসীম উদ্দিন খান সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আগামীর পথে এখনই পা ফেলতে হবে, কারণ সময় নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও সম্ভাবনাময় স্বদেশ রেখে যেতে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও ন্যায়পরায়নতার সাথে কাজ করতে হবে বলেছেন নবনিযুক্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেন, আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে প্রথমে ডোমেস্টিক ট্যুরিজমের বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়ন, সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। বিমানবন্দরকে চমৎকার গেটওয়ে হিসেবে সাজাতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের সভাপতিত্বে সভায় মন্ত্রণালয় ও অধীন সংস্থাসমূহের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিল শেখ বসিরউদ্দীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গঙ্গাবুড়ি’ প্রকল্পের দুই বছরের সফল যাত্রার পরিসমাপ্তি একযোগে উদযাপন করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল, গ্যোটে-ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ, এবং বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন। নদীর সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহ্যভিত্তিক এই শিল্প প্রকল্পটি সমসাময়িক শিল্পকর্মের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য তুলে ধরেছে।

আগামী ২৪ এপ্রিল গ্যোটে-ইন্সটিটিউটে একটি বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান, ও আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ০২ মে হাজারীবাগে অবস্থিত বৃহত্ত্ব আর্ট স্পেসে আয়োজিত এক্সিবিশনের মাধ্যমে এই যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে।


গ্যোটে ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের অর্থায়নে প্রকাশিতব্য “গঙ্গাবুড়ি” একটি শিল্পভিত্তিক গবেষনাধর্মী বই, যার মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা, নদীভিত্তিক পেশাজীবী, এবং প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মাঝে একটি চলমান সংলাপ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে; যা পুরান ঢাকার নদীর তীরের দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনচিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।

অপরদিকে, ব্রিটিশ কাউন্সিলের সার্বিক সহায়তা এবং অর্থায়নে আয়োজিত এক্সিবিশন “পাল: ভূমি, জল, পবন” প্রকল্পটির দুইবছরের শৈল্পিক যাত্রা ও সাফল্য কে তুলে ধরবে, যা দর্শকদের দেবে একটি সমৃদ্ধ ও সৃজনশীল অভিজ্ঞতা। নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি ইউনিক (EUNIC- European Union National Institutes for Culture) বাংলাদেশের ঐকান্তিক সমর্থন হিসেবে এই আয়োজন দুটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


গঙ্গাবুড়ি-রিভার হেরিটেজ প্রজেক্টটির সূচনা হয় ২০২৩ সালে। বৃহত্ত্বর আর্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় এই প্রকল্পটিতে সহযোগিতা করে ইউনিক বাংলাদেশ ক্লাস্টার সদস্য- ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা, গ্যোটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ইইউ ডেলিগেশন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশে অবস্থিত ইতালি এবং স্পেন দূতাবাস। ২০২৪-এ ব্রিটিশ কাউন্সিলের একক অর্থায়নে প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্বের সূচনা হয়।

প্রকল্পের প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন – আহমেদ রাসেল, আমিনুল ইসলাম আশিক, অনন্যা মেহপার আজাদ, কাজী সাইদুল করিম তুসো, মো. খাইরুল আলম সাদা, নুর এ আলা সিদ্দিকী ও শামীম আহমেদ চৌধুরী; এবং দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন – দিনার সুলতানা পুতুল, মোজাহিদ মুসা, বিলাস মণ্ডল, এলোদী গুইনার, মইনুদ্দিন মনি ও রূপকল্প চৌধুরী। শিল্পীদের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন পারফরমেন্স আর্টিস্ট – ফারাহ নাজ মুন, ইয়াসমিন জাহান নুপূর, জয়দেব রোয়াজা এবং নগর-লোকজ শিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু এবং সৈয়দ আহমেদ হোসেন।

শিল্পী কফিল আহমেদের বিখ্যাত গান “গঙ্গাবুড়ি” হতে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়। প্রকল্পটির সার্বিক নির্দেশনা ও পরিচালনায় ছিলেন শেহজাদ শাহরিয়ার চৌধুরী এবং বিশ্বজিৎ গোস্বামী।

জলবায়ু ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অন্তরবর্তী সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে সম্প্রতি ঢাকার পান্থপথস্থ পানি ভবনে জাতিসংঘের বাংলাদেশ আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় দ্রুত ও কার্যকর জলবায়ু পদক্ষেপ, নদী পুনরুদ্ধার, এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সব পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণ দরকার, তবে এখন বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার সময়। অন্তত দুই-তিনটি প্রকল্প দিয়েই শুরু হোক। তিনি একটি নির্দিষ্ট দিনে সকল উন্নয়ন সহযোগীদের একত্রিত করার প্রস্তাব দেন। এতে করে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সহজ হবে এবং পানি ব্যবস্থাপনায় গতি আসবে।

আলোচনায় ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান, হালনাগাদ এনডিসি এবং এডিবি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইডেনের সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়।

উভয় পক্ষই সরকার, উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি খাতের যৌথ অর্থায়নে মডেল প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।

রিজওয়ানা হাসান সাম্প্রতিক সাফল্যের মধ্যে বিভাগভিত্তিক নদী পুনরুদ্ধার, খাল সংস্কার এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে গণশুনানি বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

গুইন লুইস বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “জাতীয় নীতির সঙ্গে স্থানীয় উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্য মিলিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।”

তারা প্রায় এক দশক ধরে বন্ধ থাকা এনভায়রনমেন্ট কমিউনিটি অব প্র্যাকটিস সক্রিয় করার ওপর জোর দেন। কার্যকর আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতার জন্য কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, জাতিসংঘ অফিসের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ হর্ষদ গাইকোয়াড় এবং জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

চলতি ামস জলবায়ু ভাবনাকে বাস্তব কর্মে রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের মাধ্যমে বৈঠকটি মাধ্যমে শেষ হয়।

সামাজিক ও অবকাঠামো খাতে আরো বেশি ব্যয় করার জন্য সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও অর্থ ব্যয় ব্যবস্থার সংস্কার করায় জোর দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির চতুর্থ রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। সফর শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সংস্থাটি।

প্রয়োজন উল্লেখ  করে আইএমএফের মিশনপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় কর সংগ্রহের পরিমাণ অত্যন্ত কম। তাই কর ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। কর ব্যবস্থাকে যৌক্তিক, স্বচ্ছ ও দক্ষ হতে হবে। এর মানে হচ্ছে অব্যাহতি হ্রাস, কর সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং কর নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করতে হবে।’

ব্যাংক খাতের সমস্যা দূর করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আইএমএফ মিশনপ্রধান বলেন, ‘আইন-কানুনগুলো বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং সরকারকে দ্রুত নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঠিক করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো স্বাধীন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সংস্কার করতে হবে।’

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাঠামোগত সংস্কারের গতি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘সুশাসন উন্নত করা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর মাধ্যমে আরো বেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। এতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে এবং তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রফতানি খাতকে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ প্রতিনিধি দল জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলমান এবং সঠিক পথে রয়েছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে আগামী জুনে সিদ্ধান্ত হবে। জুনে আইএমএফের পর্ষদ সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

আইএমএফের সদ্য সমাপ্ত মিশন বাংলাদেশ সফরকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছে।

এ সময় ঋণ কর্মসূচির অধীন বিভিন্ন সংস্কার ও শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ (বিপিসি) সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে আইএমএফ মিশনের আলোচনা করেছে। আলোচনায় রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার এখনো বাজারভিত্তিক না করার বিষয়টিও উঠে আসে। এ দুটি বিষয়ে ছাড় না দেয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের সদ্য সমাপ্ত মিশন বেশ কঠোর ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মূলত এ দুই বিষয়ে বাংলাদেশ ও আইএমএফের সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আরো আলোচনার অবকাশ তৈরি হয়েছে।

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভায় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে দু-একদিনের মধ্যেই অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগের সচিবসহ সরকারের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। সেখানে ঋণ কর্মসূচির শর্ত নিয়ে আইএমএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা হবে। মূলত বিদ্যমান বাস্তবতায় রাজস্ব আহরণ ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা-সংক্রান্ত কঠিন শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এ আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির চতুর্থ রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। মিশন শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ ও আইএমএফের মধ্যে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার বিষয়ে ক্রিস পাপাজর্জিও জানান, ‘তৃতীয় ও চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন করার পথ প্রশস্ত করতে চলতি এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভাসহ সামনে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতার জন্য আলোচনা চলবে। বিদ্যমান এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশ ও তার জনগণকে সহায়তায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করছি।’

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের ৫ দশমিক ১ থেকে কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গণ-অভ্যুথানের কারণে অর্থনীতিতে ব্যাঘাত ঘটা, কঠোর নীতি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার প্রতিফলন। গত বছরের জুলাইতে মূল্যস্ফীতি এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭ শতাংশে ওঠার পর মার্চে কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটি এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫-৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি।’

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।